তফসিল ঘোষণা হলে সিদ্ধান্ত দেবে বিএনপি

বিশেষ প্রতিবেদক :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোট শেষ হতেই উপজেলাসহ আরও একগুচ্ছ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সপ্তাহে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আর রোজার আগেই তা সম্পন্ন হতে পারে। গত দুই দিনে বিএনপির ভেতরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকজন এ বিষয়টি তুলেছেন। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার ব্যাপারে দুই ধরনের মতই রয়েছে বিএনপিতে। নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নেতাকর্মীদের অবস্থান জোরালো হচ্ছে। তবে তফসিল ঘোষণার পরই উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি।

বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। ফলে নির্বাচনে না-যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত আছে তা এখন পরিবর্তন দরকার বলে মনে করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

গত বছরের ১৪ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ভোট বর্জনসহ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী পক্ষটি। তবে তাদের এসব কর্মসূচির মধ্যেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ইসি বলেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিএনপি দাবি করেছে, নির্বাচন হয়ে গেলেও তাদের ডাকে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। তারা নির্বাচন বর্জন করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি তা সঠিক। নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের আদলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে সরকার। ফলে নির্বাচনে গিয়ে তেমন লাভ হবে না। বরং এই নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে হামলা-মামলা আরও বাড়বে।

তবে দলের একজন নীতিনির্ধারক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতা ও তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা কারাগারে। অনেক নেতার সাজা হয়েছে। মামলা-মোকদ্দমা থাকায় অনেক নেতা রয়েছেন আত্মগোপনে। সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থায় রয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় এখন শুধু সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে তাদের মনোবল চাঙ্গা করা যাবে না। উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলে হাজার হাজার নেতাকর্মী সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত ১৭ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের ৪-৫ দিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৫ হাজার ৫১৪ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৭৭৮টির অধিক মামলা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এ ছাড়া ৮৪টি মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে এবং ১২৯৪ জনের বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতারাও মনে করেন, উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার কৌশল খোঁজা উচিত। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এই নির্বাচনে গেলে বিএনপির রাজনীতিতে চাঙ্গা ভাব ফিরে আসবে। নির্বাচনে যাওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এখনও এ বিষয়ে বলার সময় হয়নি। সময় এলে এ নিয়ে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। একই ধরনের মত দেন স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ নির্বাচনের পর হরতাল-অবরোধসহ টানা কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিএনপি। গত বুধবার রাতে বিএনপির পাঁচ ভাইস চেয়ারম্যান, একজন উপদেষ্টা এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে নেতাদের মতামত নেওয়া হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলন অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা। তবে আপাতত কঠোর কর্মসূচির বিরুদ্ধে মত দেন তারা। একই সঙ্গে আপাতত জন-সম্পৃক্ত কর্মসূচির প্রস্তাব দেন। আগামী রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, এখনও নেতাকর্মীরা মুক্তি পাননি। অনেক নেতাকর্মী পরোয়ানা নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। ফলে আদালত থেকে জামিন পেয়ে নেতাকর্মীদের মুক্ত করাটা এখন জরুরি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, রমজান সামনে রেখে কর্মসূচি দিতে হবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ দেওয়া ঠিক হবে না।